চীন-ভারতের হাতে এশিয়ার ভবিষ্যৎ
চলতি একবিংশ শতকেই বিশ্ব অর্থনীতির কেন্দ্র হতে যাচ্ছে এশিয়া। প্রশান্ত
মহাসাগর থেকে ভূমধ্যসাগর পর্যন্ত হবে এই এশিয়ার বিস্তার। তবে সেটি সহজে হবে না। বিশ্ব
অর্থনীতিতে এশিয়ার কেন্দ্র হয়ে ওঠার বিষয়টি অনেকাংশে নির্ভর করছে চীন, ভারত ও জাপানের
পারস্পরিক সম্পর্কের ওপর। এমনটাই মনে করেন বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ও গবেষণা সংস্থা সেন্টার
ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) চেয়ারম্যান রেহমান সোবহান।
গবেষণা প্রতিষ্ঠান সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিং বা সানেম
আয়োজিত বে অব বেঙ্গল ইকোনমিক ডায়ালগের দ্বিতীয় দিনের এক অধিবেশনে রেহমান সোবহান এসব
কথা বলেন। গতকাল মঙ্গলবার সকালে অনলাইনে এ অধিবেশন অনুষ্ঠিত হয়। শ্রীলঙ্কার পাথ ফাইন্ডার
ফাউন্ডেশনের বিশেষ ফেলো সুমিথ নাকানদালার সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত এ অধিবেশনে প্রধান বক্তা
ছিলেন তিনি। অধিবেশনে আরও বক্তব্য দেন সিপিডির বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমান, সানেমের
নির্বাহী পরিচালক সেলিম রায়হানসহ থাইল্যান্ড ও ভারতের একাধিক অর্থনীতিবিদ।
অর্থনীতিবিদ রেহমান সোবহান তাঁর বক্তব্যে বলেন, দক্ষিণ এশিয়ায় ভারতের
নেতৃত্বে এশিয়ার উত্থান প্রক্রিয়ায় অন্যদের যুক্ত হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে
তা হয়নি। এখন সব দেশকে নিজের মতো করে এই প্রক্রিয়ায় যুক্ত হতে হবে বলে মনে করেন তিনি।
ভারতের প্রসঙ্গে রেহমান সোবহান বলেন, অটল বিহারি বাজপেয়ির সময় ভারত
লুক ইস্ট বা পূর্বমুখী নীতি গ্রহণ করে। ভারতের সাবেক পররাষ্ট্রসচিব রাজীব সিক্রি এই
নামে একটি বইও লেখেন। কিন্তু ভারতের এই নীতি ছিল একচোখা। কারণ, এই নীতিতে ভারত দক্ষিণ
এশিয়া ও বড়জোর পূর্ব এশিয়া পর্যন্ত ভাবত। তখন এবং এখনো ভারতের বৃহত্তম বাণিজ্য অংশীদার
হচ্ছে চীন। চীনকে ছাড়া ভারতের ‘লুক
ইস্ট’ নীতি কখনোই পূর্ণাঙ্গ হবে না—এই বাস্তবতা মেনে নিতে হবে। ভারতকেও বিষয়টি মাথায়
রাখতে হবে। তারা কীভাবে রাজনৈতিক ও কৌশলগত সমস্যা মোকাবিলা করে, সেটাও গুরুত্বপূর্ণ।
রেহমান সোবহান মনে করেন, দ্বিপক্ষীয় বা আঞ্চলিক বাণিজ্য বৃদ্ধির ক্ষেত্রে
সহযোগী দেশগুলোর মধ্যে নানা ধরনের সমন্বয়ের প্রয়োজন হয়। এসব না থাকলে বাণিজ্য বৃদ্ধি
পায় না। তাই রেহমান সোবহান বলেন, বিদ্যমান নেটওয়ার্কের ভিত্তিতে এগোতে হবে।
এই প্রসঙ্গে সিপিডির বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আঞ্চলিক বা দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য বৃদ্ধিতে ব্যবসায়িক প্রক্রিয়ায় সমন্বয় আনতে হবে। সেই সঙ্গে দরকার শুল্কায়নে অভিন্ন পন্থা। তথ্য ভাগাভাগি করতে হবে। কিন্তু মোস্তাফিজুর রহমান প্রশ্ন তোলেন, এই সমন্বয় কোন পর্যায়ে ঘটবে। জবাবে রেহমান সোবহান বলেন, শুধু বাজারের ওপর নির্ভর করলে হবে না। বিসিআইএম কার্যকর হলে এই প্রক্রিয়া এমনিতেই চালু হয়ে যেত। চীনারা প্রথম দিন থেকেই তা চেয়েছে। এডিবি ইউনান প্রদেশ থেকে লাওস পর্যন্ত যোগাযোগ অবকাঠামো তৈরি করেছে। চীনারা একধরনের নির্বিঘ্ন যাতায়াতব্যবস্থা গড়ে তুলতে পেরেছে উল্লেখ করে রেহমান সোবহান বলেন, এরা বেইজিং থেকে ইংলিশ চ্যানেল পর্যন্ত নেটওয়ার্ক গড়ে তুলেছে।
সঞ্চালকের বক্তব্যে সুমিথ নাকানদালার বলেন, শুধু এশিয়া না বলে সংস্কৃতি
তাত্ত্বিক এডওয়ার্ড সাঈদের ভাষায় ওরিয়েন্ট বা প্রাচ্য বলাই সম্ভবত শ্রেয়। প্রাচ্যই
হবে এখন প্রবৃদ্ধির কেন্দ্র।