সেপ্টেম্বরে ডেঙ্গুর সর্বোচ্চ প্রকোপ হতে পারে
আগামী সেপ্টেম্বরে উচ্চ আর্দ্রতা ও অবিরাম বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা
রয়েছে। সাধারণত এমন আবহাওয়ায় মশার বিস্তার সহজ হয়। ফলে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী বাড়তে
পারে। এসব রোগী ভর্তি হওয়ায় রাজধানীর হাসপাতালগুলোতে রোগীর চাপ বাড়বে বলে আশঙ্কা
জানানো হয়েছে ডেঙ্গু পরিস্থিতির পূর্বাভাস-সংক্রান্ত প্রতিবেদনে।
গতকাল
রোববার দুপুরে রাজধানীর গুলশানে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) সম্মেলন
কক্ষে আয়োজিত ‘ডেঙ্গু ও চিকুনগুনিয়া সংলাপ আগস্ট ২০২৫: প্রতিরোধ, প্রস্তুতি ও
নিরসন’ শীর্ষক সমন্বয় সভায় এই ডেঙ্গু পরিস্থিতির পূর্বাভাস প্রতিবেদন উপস্থাপন করা
হয়।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আগস্টে টানা বৃষ্টি হওয়ায় ও বিগত বছরের অভিজ্ঞতা অনুসারে
সেপ্টেম্বরে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা দ্রুত বাড়তে পারে বলে সতর্ক করেছেন
স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। এতে হাসপাতালগুলোতে ভর্তির চাপও বাড়তে পারে। তবে অক্টোবরে
বর্ষা শেষে সংক্রমণ কমার সম্ভাবনা রয়েছে। যদিও দ্বিতীয় দফায় প্রাদুর্ভাব চ্যালেঞ্জ
তৈরি করতে পারে। এ সময়ও লার্ভিসাইডিং ও স্যানিটেশন কার্যক্রম জোরদার রাখার ওপর জোর
দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।
সভায়
মশক নিয়ন্ত্রণে প্রতিবন্ধকতার বিষয়ে বলা হয়েছে, জনগণের সচেতনতার অভাব, সঠিকভাবে
কীটনাশক প্রয়োগ না করা ও অপর্যাপ্ত সরকারি উদ্যোগ এ জন্য দায়ী। অপরিকল্পিত নগরায়ণ,
পানি নিষ্কাশন সমস্যা ও আবহাওয়ার প্রভাবেও মশার বংশবিস্তার বাড়ছে। পাশাপাশি
বিভিন্ন সংস্থার সমন্বয়হীনতা ও ফগিংনির্ভর ভ্রান্ত ধারণা পরিস্থিতিকে আরও জটিল
করছে।
সভায়
ডেঙ্গু রোধে কিছু সুপারিশ করা হয়েছে। যেমন– বর্ধিত ভেক্টর নিয়ন্ত্রণ ও ঝুঁকিপূর্ণ
ওয়ার্ডে প্রতিদিন লার্ভা ধ্বংসে অভিযান চালানো। এসএমএস, সামাজিক ও স্থানীয়
গণমাধ্যমে সচেতনতা বাড়ানো। পানি জমা ও বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় কঠোর আইন প্রয়োগ করে
জরিমানা আরোপ করা। প্রতি সপ্তাহে এলাকাবাসী ও শিক্ষার্থীদের নিয়ে
পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা অভিযান চালানো।
এ
ছাড়া ডেঙ্গু প্রতিরোধে রাজউক, সিভিল এভিয়েশন, ক্যান্টনমেন্ট বোর্ডসহ সংস্থাগুলোর
সমন্বয় জোরদার করা। প্রাদুর্ভাব হওয়া এলাকায় দ্রুত সাড়া দিতে ডিজিটাল রিপোর্টিং
সিস্টেম চালু করা। হাসপাতাল ও ক্লিনিকে ডেঙ্গু ওয়ার্ড, পর্যাপ্ত সরঞ্জাম,
প্রশিক্ষিত কর্মী ও দক্ষ ট্রাইএজ সিস্টেম নিশ্চিত করে জাতীয় নির্দেশিকা অনুযায়ী
চিকিৎসা দেওয়া।
সভা
শেষে সংবাদ সম্মেলনে ডিএনসিসির প্রশাসক মোহাম্মদ এজাজ বলেন, ডেঙ্গু মোকাবিলায়
সবাইকে মিলেই কাজ করতে হবে। মশা নিধনের পাশাপাশি বর্জ্য ব্যবস্থাপনাকেও গুরুত্ব
দিতে বলেন তিনি। মোহাম্মদ এজাজ আরও বলেন, সামনে আসা ডেঙ্গুর ঢেউকে গুরুত্ব দিয়ে
মনিটরিং ও মোকাবিলা করা হবে। সবকিছু নিখুঁত না হলেও ধীরে ধীরে উন্নতির চেষ্টা
চলছে।
ডেঙ্গুতে
আরও এক শিশুর মৃত্যু
ডেঙ্গু
আক্রান্তদের মধ্যে গতকাল সকাল ৮টা পর্যন্ত আগের ২৪ ঘণ্টায় আরও এক শিশুর মৃত্যু
হয়েছে। ১০ বছর বয়সী শিশুটি চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিল। তার
বাড়ি চট্টগ্রামের সাতকানিয়ায়। এ নিয়ে চলতি বছর ডেঙ্গুতে মোট মৃতের সংখ্যা
দাঁড়িয়েছে ১১৫ জনে। তাদের মধ্যে ১৯ জনের বয়স ২০ বছরের নিচে। গতকাল স্বাস্থ্য
অধিদপ্তর থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
এতে
বলা হয়েছে, গত এক দিনে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন আরও ৪৩০ জন। এ বছর ডেঙ্গু আক্রান্ত
হয়ে হাসপাতালে ভর্তি রোগী বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৮ হাজার ৬৩২ জনে। ডেঙ্গু নিয়ে বর্তমানে
দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন এক হাজার ২৮১ জন। তাদের মধ্যে ঢাকার বিভিন্ন
হাসপাতালে ৪১৪ জন, ঢাকার বাইরের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি ৮৬৭ জন।