দুই সহস্রাধিক বিস্ফোরণের প্রভাব আজও বিদ্যমান
মানব ইতিহাসে যত কলঙ্কিত ঘটনা আছে, তার মধ্যে সবার আগেই হয়তো থাকবে
পারমাণবিক বিস্ফোরণের ঘটনা। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের শেষ দিকে ১৯৪৫ সালের ৬ ও ৯ আগস্ট
জাপানের হিরোশিমা ও নাগাসাকিতে যুক্তরাষ্ট্রের চালানো পারমাণবিক ধ্বংসযজ্ঞ আজও
বিশ্ববাসীর স্মৃতিতে টাটকা। সেই ধ্বংসযজ্ঞে মারা গিয়েছিল দেড় লাখেরও বেশি মানুষ।
এর পর পারমাণবিক অস্ত্র বিলুপ্ত করার দাবিতে গোটা পৃথিবীতে নানা ধরনের আন্দোলন
হয়েছে। কিন্তু এই বিশ্বধ্বংসী প্রতিযোগিতা তো বন্ধ হয়ইনি, উল্টো পারমাণবিক ঝুঁকি
আরও বেড়েছে। পরিসংখ্যান বলছে, গত ৮০ বছরে হিরোশিমা-নাগাসাকি হামলা ছাড়াও দুই
সহস্রাধিক পারমাণবিক বোমার পরীক্ষামূলক বিস্ফোরণ ঘটানো হয়েছে। যার তেজস্ক্রিয়তার
প্রভাব আজও বিদ্যমান গোটা পৃথিবীতে।
১৯৫০
এবং ৬০-এর দশকে যুক্তরাষ্ট্রের উটাহ অঙ্গরাজ্যের সল্টলেক সিটির মেরি ডিকসন ছিলেন
সেই লাখ লাখ আমেরিকান স্কুল শিক্ষার্থীর মধ্যে একজন, যারা পারমাণবিক বোমা পরীক্ষার
ক্ষতির শিকার। সে সময় যুক্তরাষ্ট্র নেভাদা রাজ্যে পারমাণবিক অস্ত্রের পরীক্ষামূলক
বিস্ফোরণ ঘটাচ্ছিল। বায়ুমণ্ডলীয় সে পরীক্ষা থেকে উৎপন্ন বেশির ভাগ তেজস্ক্রিয়
ধুলো ছড়িয়ে পড়েছিল। ডিকসন জানান, তিনি থাইরয়েড ক্যান্সারে ভুগেছেন; তাঁর বড়
বোন ৪০-এর দশকে লুপাস রোগে মারা যান। তাঁর ছোট বোনকে সম্প্রতি বলা হয়েছে যে, তাঁর
অন্ত্রের ক্যান্সার শরীরের অন্যান্য অংশে ছড়িয়ে পড়েছে। তাঁর ভাগনিদেরও
স্বাস্থ্য সমস্যা রয়েছে।
মার্কিন পরিবেশ সুরক্ষা সংস্থা বলছে, পারমাণবিক বিস্ফোরণের ফলে সৃষ্ট বিকিরণ
ক্যান্সারের আশঙ্কা বাড়িয়ে তোলে। এই বিকিরণের মাত্রা বাড়ার সঙ্গে ঝুঁকিও বাড়ে।
তারা বিকিরণের সংস্পর্শে আসা মানুষদের পরীক্ষা করে এ তথ্য পান। নেভাদা পরীক্ষা
কেন্দ্রের আশপাশের রাজ্যগুলোতে বসবাসকারী এবং তেজস্ক্রিয়তার সংস্পর্শে আসা
মানুষরা, যার মধ্যে অ্যারিজোনা, নেভাদা, উটাহ, ওরেগন, ওয়াশিংটন রাজ্য এবং আইডাহো
অন্তর্ভুক্ত।
১৯৪৫
থেকে ১৯৯৬ সালের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র ছাড়াও যুক্তরাজ্য, সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়ন,
ফ্রান্স, চীন, ভারত, পাকিস্তানসহ বেশ কয়েকটি দেশ ২০০০-এরও বেশি পারমাণবিক পরীক্ষা
চালিয়েছে, যা হয়তো তাদের নিজস্ব পারমাণবিক প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি করেছিল; কিন্তু
মানবিক ও বিশেষজ্ঞ দৃষ্টিকোণ থেকে তা আজও বিশ্বের নিরাপত্তাকে দুর্বল করে চলেছে।
সিএনএন।