বিজিএমই নির্বাচন: সম্মিলিত পরিষদের ইশতেহার ঘোষণা
কোভিড-১৯ মোকাবিলায় ও শিল্প পুনরুদ্ধারে
প্রণোদনার অর্থ পরিশোধের সময়সীমা বাড়ানো হবে। পোশাকশিল্পে ঋণের কিস্তি পরিশোধের সময়সীমা
১৮ মাস থেকে বৃদ্ধি ও কিস্তির আকার ছোট করার জন্য সরকারকে প্রস্তাব করা হবে। সংকট প্রতিকারে
স্বল্পমেয়াদী মধ্য মেয়াদী এবং দীর্ঘমেয়াদী প্রকল্পের উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে। শিল্পের
ক্ষতিগুলো চিহ্নিত করে তা সামলে ওঠা এবং শিল্পের পুনরুদ্ধারের লক্ষ্যে সরকারের কাছে
স্বল্প মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদী নীতি-সহায়তা প্রস্তাব করা হবে।
মঙ্গলবার (১৬ মার্চ) রাজধানীতে হোটেল সোনারগাঁয়ে
বিজিএমই নির্বাচন উপলক্ষে সম্মিলিত পরিষদের ইশতেহারে এসব ঘোষণা দেন পরিষদের প্যানেল
লিডার ফারুক হাসান।
তিনি বলেন, নতুন বাজার সম্প্রসারণে উদ্যোগ
নেয়া হবে। নতুন বাজারে পোশাক রফতানি জন্যে প্রণোদনা ৪ শতাংশ থেকে ৫ শতাংশ উন্নীত করা
হবে। বিভিন্ন রোড দেশ যেমন- দক্ষিণ কোরিয়া, জাপান, রাশিয়া ল্যাটিন আমেরিকা, ভারতসহ
সম্ভাবনাময় নতুন বাজারগুলোতে রোড শো আয়োজন এবং গুরুত্বপূর্ণ মেলাগুলোতে বিজিএমই সদস্যদের
অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা হবে। মধ্যপ্রাচ্য ও আফ্রিকায় আমাদের পোশাকের শুল্কমুক্ত রফতানি
নিশ্চয়তার জন্য কাজ করবে সম্মিলিত পরিষদ।
ইশতেহারে আরও বলা হয়, বিজিএমইএ ও কাস্টমস
বন্ডের কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে একটি যৌথ কমিটি গঠন করে পোশাক খাতের নিয়মিত সমস্যাগুলো
দ্রুত সমাধান করার চেষ্টা করা হবে। পাশাপাশি কাস্টম সংক্রান্ত সকল হয়রানি বন্ধ করার
উদ্যোগ নিতে সেল গঠন করা হবে। কাস্টমসের মান উন্নয়নে বিজিএমইএ’র একজন সহ-সভাপতি
ও একজন পরিচালককে এই সেলের তত্ত্বাবধায়নে রাখা হবে। আমদানিকৃত পণ্য খালাসকালীন ও পরবর্তী
অডিট কার্যক্রম চলাকালীন সৃষ্ট বিলম্বিত রফতানি কার্যক্রম ত্বরান্বিত করার জন্য কাস্টম
সংশ্লিষ্ট নীতিনির্ধারকদের সঙ্গে আলোচনার ব্যবস্থা গ্রহণ এবং প্রয়োজনীয় নীতিমালা
সংশোধনের উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে। আমদানি ও রফতানির অডিট কার্যক্রমে অটোমেশন চালুর উদ্যোগ
নেয়া হবে। স্যাম্পল ক্লিয়ারিং এর জটিলতা নিরসন পদ্ধতির ব্যবহার, এক্সপোর্ট প্রক্রিয়া
সহজীকরণ, আমদানি ও রফতানির অটোমেশনসহ এইস এস কোর্ড হালনাগাদ উন্নতিকরণ করা হবে।
সরকার অনুমোদিত লিকুইডেটর এজেন্ট নিয়োগের
ব্যবস্থা করন। অর্থঋণ আদালতে মামলা নিষ্পত্তির সময়সীমা তিন মাসের মধ্যে নির্ধারণের
ব্যবস্থাগ্রহণের উদ্যোগ নেয়া। সরকারের সঙ্গে এফবিসিসিআই, বিকেএমইএসহ অন্যান্য ব্যবসায়ী
সংগঠনের সমন্বয়ে সফল আলোচনার মাধ্যমে একটি বাস্তবসম্মত কমিটি করে কাজ করা, মালিক কল্যাণ
তহবিল গঠন করা হবে বলে উল্লেখ করা হয় ইশতেহারে।
ইশতেহারে ফারুক হাসান বলেন, ক্ষুদ্র ও
মাঝারি শিল্পের উন্নয়ন কাজ করা, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পপ্রতিষ্ঠান বাৎসরিক রফতানির
পরিমাণ সর্বনিম্ন পাঁচ মিলিয়ন ডলার থেকে উন্নীত করে ১০ মিলিয়ন ডলার নির্ধারণ করা,
যার মাধ্যমে অধিক প্রতিষ্ঠানকে প্রণোদনা সুবিধার আওতায় নিয়ে আসা সম্ভব হবে। সরকারি
ফাইন্যান্সিং স্কিমের আওতায় ক্ষুদ্র ও মাঝারি পোশাকশিল্পের উপযুক্ত সংজ্ঞায়ন ও অন্তর্ভুক্তকরণ
যার মাধ্যমে ক্ষুদ্র ও মাঝারি পোশাকশিল্প ৪ থেকে ৫ শতাংশ সুদ হারে ঋণ সুবিধা গ্রহণ
করতে পারে।
ব্যাংক থেকে কম সুদে ঋণের ব্যবস্থা :
সুষ্ঠু ব্যাংকিং নীতিমালার মাধ্যমে ক্ষুদ্র
এবং মাঝারি পোশাকশিল্পের জন্য সুদের হার ও ব্যাংকিং চার্জ কমানোর ব্যাপারে সরকার ও
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নীতি সহায়তা চাওয়া হবে।
ফারুক হাসান বলেন, বিশ্ববাজারে পোশাকের
ইমেজ সংকট রয়েছে। ইমেজ বৃদ্ধি করাই হবে আসল কাজ। এছাড়া রফতানি কীভাবে বাড়ানো যায় অর্থাৎ
মার্কেট শেয়ার বাড়ানোর বিষয়ে সর্বাত্মক চেষ্টা করা হবে।
শ্রমিক ছাঁটাইয়ের বিষয়ে ফারুক হাসান বলেন,
আমাদের রফতানি বাড়ানো গেলে এবং সরকারের সহায়তা বাড়ানো হলে ইনশাআল্লাহ শ্রমিক ছাঁটাইয়ের
ঘটনা কমে যাবে।
বিজিএমইএর সাবেক সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান
বলেন, ইশতেহার দেয়া বড় বিষয় নয়, মুল বিষয় হলো- পোশাক শিল্পে যখন যেই সমস্যা হবে তা
মোকাবেলা করে এই শিল্পকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া।
বিজিএমএমইএ ও এফবিসিসিআইএ’র সাবেক সভাপতি
এবং সংসদ সদস্য শফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন বলেন, রানা প্লাজা দুর্ঘটনা ও তাজরীন ফ্যাশনে
অগ্নিকাণ্ডসহ নানা দুর্ঘটনা ঘটেছে সম্মিলিত পরিষদের নেতৃত্বের সময়ে। কিন্তু আমরা সাহস
ও দৃঢ়তার সঙ্গে তা মোকাবেলা করেছি।
বিজিএমইএ’র সাবেক সভাপতি
ও সংসদ সদস্য সালাম মুর্শেদি বলেন, আমার দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞতায় বলতে পারি বিজিএমইএর
ইতিহাসে বর্তমান সম্মিলিত পরিষদ এত অভিজ্ঞ টিম আর কখনোই পায়নি। পোশাক খাতের বর্তমান
সংকট মোকাবেলা করার জন্য যোগ্য নেতা দরকার। জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক পর্যায়ে সেই নেতৃত্ব
দেয়ার জন্য ফারুক হাসানের কোনো বিকল্প নেই। বিজিএমইএতে নেতৃত্ব নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে কাদা
ছোড়াছুড়ি চলছে, যা এই শিল্পের জন্য একটা বড় সংকট।
এ বিষয়ে সালাম মুশের্দি বলেন, কোনো কাদা
ছোড়াছুড়িতে আমরা নেই। শিল্পকে এগিয়ে নেয়াই আমাদের মূল লক্ষ্য।