বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে আবাসিক ব্যবস্থা বাড়ান
বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলে আসন পাওয়া পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীর সর্বপ্রথম ও সবচেয়ে বড় অধিকার। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে কম খরচে আবাসন সুবিধা আছে বলেই শিক্ষার্থীরা পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়। রাজনৈতিক কোনো সমস্যা না থাকলে ও পড়াশোনার পরিবেশ বিরাজমান থাকলে কোন শিক্ষার্থী হলে থাকতে না চায়! বড় ব্যাপার হচ্ছে, পড়াশোনার খরচ বাঁচানো।
আমাদের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে মধ্যবিত্ত ও নিম্ন-মধ্যবিত্ত পরিবার থেকে উঠে আসা শিক্ষার্থীর সংখ্যাই বেশি। অর্থ সংকট ও পারিবারিক দুর্দশার মধ্যে বড় হওয়া শিক্ষার্থীদের ভর্তি হওয়ার পরই হলে আবাসন অতি জরুরি। কেননা, ক্যাম্পাসের বাইরে মেস বা বাসা নিয়ে থাকতে গেলে অনেক খরচ হয়। গ্রামে অবস্থিত বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর আশপাশে থাকলেও ভালোই খরচা। তাই হলে থাকতে পারলে নিজের ও পরিবারের অনেক সুবিধা হয়। তা ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সামাজিক ও সাংস্কৃতিক পরিবেশে সক্রিয় থাকার জন্যও হলে থাকা প্রয়োজন।
এভাবে সব দিক বিবেচনা করলে প্রত্যেক শিক্ষার্থীর কাছেই হল একটা আবেগ ও অধিকারের জায়গা। তাই প্রত্যেকেরই আকাঙ্ক্ষা থাকে হলে ওঠার। কিন্তু সবার আকাঙ্ক্ষা তো পূরণ হয় না। কারণ আমাদের দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে প্রত্যেক শিক্ষার্থীর আকাঙ্ক্ষা পূরণের মতো পর্যাপ্ত আবাসন নেই। ফলে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের বড় অংশকে ক্যাম্পাসের বাইরে মেসে অথবা ভাড়া বাসায় থাকতে হয়। এখান থেকেই শিক্ষার্থীদের মধ্যে বৈষম্যের শুরু।
একই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী হয়ে কেউ থাকে বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণে, কেউ থাকে দূরে। যারা মেস বা বাসায় থাকে তাদের মেস ভাড়া, পানির বিল, বিদ্যুৎ বিল, গ্যাস বিল, ওয়াইফাই বিল, বুয়া বিল ইত্যাদি নিয়ে প্রতি মাসে অনেক টাকা খরচ গুনতে হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের একই ক্লাসের শিক্ষার্থী হয়েও কেউ ৫-১০ মিনিট হেঁটে ক্লাসে যায়। অনেকেই খুব সকালে উঠে বাস, সিএনজি, রিকশা ইত্যাদি পরিবহনে এসে ক্লাস ধরে। কেননা, সে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অনেক দূরের মেসে থাকে, যেখানে মেস ভাড়া কম। তার বিশ্ববিদ্যালয়ের সামাজিক ও সাংস্কৃতিক কার্যক্রমে অংশগ্রহণ সহজ হয় না। মেয়েদের অতিরিক্ত নিরাপত্তার বিষয় চিন্তা করতে হয়।
এগুলো খুবই মৌলিক বিষয়। আরও অনেক সূক্ষ্ম বিষয় রয়েছে। যেমন যারা হলে থাকে তাদের অনেক পরিচিতি থাকে। হলের শিক্ষার্থীদের মধ্যে একতা থাকে, ভ্রাতৃত্ব থাকে। আরও থাকে বড় একটা নেটওয়ার্ক। এসব জিনিস থেকে হলে থাকা শিক্ষার্থীরা অনেক সুবিধা পায়। তা ছাড়া যে কোনো নেতৃত্ব নির্বাচনে প্রায় সময়ই হলে থাকা শিক্ষার্থীরা বেশি অগ্রাধিকার পায়। সুতরাং এসব বিষয় হল ও হলের বাইরে থাকা শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিশাল ফারাক তৈরি করে। তাই সমমনা, সমান চিন্তাভাবনা ও সমদক্ষতার অধিকারী শিক্ষিত জাতি গড়ে তুলতে সব শিক্ষার্থীর জন্য আবাসন নিশ্চিত করা অতি জরুরি।
যেখানে যত্রতত্র দু’দিন পরপর পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন করা হচ্ছে, সেখানে বিদ্যমান বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর আবাসন সংকট নিরসন করা কি খুবই কঠিন? নাকি আবাসন সংকটকে বাঁচিয়ে রেখে জাতির মেধাবী সন্তানদের লেজুড়বৃত্তিক ছাত্র সংগঠনের হাতে ন্যস্ত রাখার কৌশল?
মো. তারিকুল ইসলাম: শিক্ষার্থী, ট্যুরিজম অ্যান্ড হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্ট বিভাগ,
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়