টিসিবির ১৫ টাকার পেঁয়াজের ক্রেতা নেই
দুপুর সাড়ে ১২টা, রাজধানীর আজিমপুরে পুরাতন
কবরস্থানের উত্তরপাশে প্রবেশদ্বারের বিপরীত দিকে রাস্তায় ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের
(টিসিবি) ভ্রাম্যমাণ ট্রাকসেল দাঁড়িয়ে। সেখানে বিভিন্ন নিত্যপণ্য যেমন- পেঁয়াজ, চিনি,
সয়াবিন ও মসুরের ডালের বস্তা সাজানো। অন্যান্য পণ্যের তুলনায় ট্রাকের অধিকাংশ জায়গা
দখল করে আছে পেঁয়াজের বস্তাগুলো।
ট্রাকের ওপর বিক্রির দায়িত্বে থাকা দুই
ব্যক্তির চোখ খুঁজে বেড়াচ্ছে ক্রেতা। বেশ কিছুক্ষণ পর এক ক্রেতা এসে দুই লিটার তেল
চাইলে বিরক্তির সুরে বিক্রেতাদের একজন বলেন, ‘শুধু তেল বিক্রি
হয় না। নিতে হলে ৩৮০ টাকার প্যাকেজ (৬ কেজি ৬৫০ গ্রাম পেয়াজ, এক কেজি ডাল, এক কেজি
চিনি ও দুই লিটার তেল) নিতে হবে’
এবার কিছুটা ক্ষুব্ধস্বরে ক্রেতার জবাব,
‘না লাগলেও সব
পণ্য নিতে হবে।’ প্রত্যুত্তরে
বিক্রেতা বললেন, ‘প্যাকেজে না দিলে পেঁয়াজ কিনবেন না। সরকার
কি টনে টনে পেঁয়াজ বুড়িগঙ্গায় ভাসিয়ে দেবে?’ কথা না বাড়িয়ে
সামনে হেঁটে যান ক্রেতা।
ঘটনাটি সোমবারের।
টিসিবির পণ্যবিক্রেতা আবদুল হালিম বলেন,
‘করোনাকালে পেঁয়াজের
জন্য হাহাকার পড়ে যায়। ক্রেতারা ঘণ্টার পর ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে পেঁয়াজ কিনত। কেউ লাইনে
দাঁড়িয়ে পেঁয়াজ না পেলে সরকারের চৌদ্দগোষ্ঠী উদ্ধার করত! কিন্তু এখন দৃশ্যপট সম্পূর্ণ
বিপরীত। ক্রেতার জন্য তীর্থের কাকের মতো দাঁড়িয়ে থাকতে হয়।’
‘প্যাকেজ ছাড়া পণ্য বিক্রি করি না বলে কথা
শুনতে হয়। ১৫ টাকা কেজি তাও মানুষ কিনতে চায় না। ট্রাকের তেল শেষ হয়ে গেলে আর পেঁয়াজ
বিক্রি হয় না। এই পেঁয়াজ বিক্রির জন্য রাত ১২টা-১টা পর্যন্ত রাস্তায় ডিউটি করতে হয়।’
ট্রাকের ওপর বসে থাকা অন্যজন বলেন, ‘আগে প্রতিদিন
তিন টন পেঁয়াজ বিক্রি হতো। কিন্তু বর্তমানে দুই দিনে টেনেটুনে এক টন পেঁয়াজ বিক্রি
হয়। এখনও সরকারের গুদামে হাজার হাজার কেজি পেঁয়াজ মজুত রয়েছে, এগুলো দ্রুত বিক্রি কিংবা
বিতরণ করে দেয়া উচিত।’
তবে টিসিবির এই প্যাকেজ পদ্ধতিতে ক্রেতারা
অসন্তুষ্ট।
ক্ষুদ্রব্যবসায়ী সাজু মিয়া তেল ও মসুরের
ডাল কিনতে গিয়েছিলেন টিসিবির গাড়ির কাছে। প্যাকেজের কারণে কিনতে না পেরে ক্ষোভমিশ্রিত
কণ্ঠে বলেন, ‘যে ইন্ডিয়ান পেঁয়াজ বিক্রি করে তা খেতে মজা না, দেশি
পেঁয়াজ একটা দিয়ে যে তরকারি রান্না হয় ইন্ডিয়ান পেঁয়াজ তা তিনটি দিয়েও স্বাদ হয় না।
তাই টাকা বেশি লাগলেও সবাই দেশি পেঁয়াজ কিনে খায়। প্যাকেজের কারণে পেঁয়াজ প্রয়োজন না
হলেও কেনার বিষয়টি খুব বিরক্তিকর।’