ইচ্ছাকৃত খেলাপির বিধান থাকছে না
ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপি
চিহ্নিত করার বিধান আর থাকছে না। বিভিন্ন ধাপ পেরিয়ে ইচ্ছাকৃত খেলাপির তালিকা করা অনেক
জটিল ও বাস্তবতাবিবর্জিত বিবেচনায় ব্যাংক কোম্পানি আইনের প্রস্তাবিত সংশোধন থেকে এই
ধারা বাদ দেওয়া হয়েছে। গ্রুপভুক্ত এক প্রতিষ্ঠান খেলাপি হলে আরেক প্রতিষ্ঠানের ঋণ পাওয়ার
বিধানও বাদ দেওয়া হচ্ছে। এছাড়া ব্যাংকের পর্ষদে পারিবারিক প্রভাব কমাতে পরিচালক সংখ্যা
কমিয়ে সর্বোচ্চ ২০ জন থেকে ১৫ জন করা হচ্ছে, যার অন্তত ৮ জন হবেন স্বতন্ত্র। স্বতন্ত্র
পরিচালকদের মধ্যে থেকে ব্যাংকের চেয়ারম্যান নিয়োগের প্রস্তাব থাকছে। পরিচালক পদের মেয়াদ
১২ বছর থেকে ৬ বছরে নামিয়ে আনা হচ্ছে। এক পরিবার থেকে সর্বোচ্চ দুজন পরিচালকের বিধান
যুক্ত হচ্ছে।
ব্যাংক কোম্পানি
আইনের প্রস্তাবিত সংশোধনী এরই মধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ অনুমোদন করেছে।
পরবর্তী প্রক্রিয়া অনুসরণ করে আগামী মাসের মধ্যে সংশোধিত আইন অধ্যাদেশ আকারে জারির
কথা রয়েছে। আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে তিনটি নির্বাচনের আগে ব্যাংক কোম্পানি আইনে নানা
শিথিলতা আনা হয়। সংশোধিত আইনে যার অনেক কিছুই বাদ যাচ্ছে।
সর্বশেষ ২০২৩
সালে সংশোধিত আইনে বলা হয়েছে, প্রতিটি ব্যাংক ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপির তালিকা তৈরি করে বাংলাদেশ
ব্যাংকে পাঠাবে। ইচ্ছাকৃত খেলাপি চিহ্নিত ও চূড়ান্ত করার বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক সময়ে
সময়ে নির্দেশনা জারি করবে। ইচ্ছাকৃত খেলাপির নাম চূড়ান্ত করার আগে সংশ্লিষ্ট ঋণগ্রহীতাকে
তাঁর বক্তব্য উপস্থাপনের সুযোগ দিতে হবে। সংক্ষুব্দ ব্যক্তি ৩০ দিনের মধ্যে বাংলাদেশ
ব্যাংকের কাছে ‘আপিল’ করতে পারবে। বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এসব ধাপ
পেরিয়ে ইচ্ছাকৃত খেলাপির তালিকা চূড়ান্ত করা অনেক জটিল। যে কারণে এখনও পর্যন্ত চূড়ান্তভাবে
কাউকে ইচ্ছাকৃত খেলাপি হিসেবে চিহ্নিত করা যায়নি। ফলে এ ধারা বাদ দিয়ে ঋণখেলাপিদের
ওপর নানা বিধিনিষেধ বহাল থাকবে। সর্বশেষ সংশোধনীতে পরস্পর স্বার্থসংশ্লিষ্ট গ্রুপভুক্ত
কোনো খেলাপি ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান বা কোম্পানি যদি ইচ্ছাকৃত খেলাপি না হয় তাহলে বাংলাদেশ
ব্যাংকের অনুমোদন নিয়ে ঋণ দেওয়া যাবে। প্রস্তাবিত আইন থেকে এ ধারা বাদ দেওয়া হচ্ছে।
পারিবারিক
ক্ষমতা কমানো হচ্ছে
সংশোধিত আইনে পরিবারের সংজ্ঞার আওতা বাড়ছে। স্ত্রী, স্বামী, পিতা, মাতা, সন্তান, ভাই,
বোন ছাড়াও শ্বশুরপক্ষ, ভাই বা বোনের স্ত্রী বা স্বামীপক্ষও পরিবার হিসেবে গণ্য হবে।
একই পরিবার, ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান বা কোম্পানির নামে ১০ শতাংশ শেয়ার ধারণের বিধান থাকছে।
তবে ব্যাংকের নীতি নির্ধারণে ৫ শতাংশের বেশি ভোটিং পাওয়ার থাকবে না।
এক সময় কোনো
ব্যক্তি দুই মেয়াদে ৬ বছরের বেশি পরিচালক থাকতে পারতেন না। ২০১৮ সালে সংশোধনীর মাধ্যমে
টানা ৯ বছর এবং ২০২৩ সালের সংশোধনীতে আরও বাড়িয়ে টানা ১২ বছর করা হয়। প্রস্তাবিত সংশোধনীতে
বলা হয়েছে, একাধিকক্রমে দুই মেয়াদে সর্বোচ্চ ৬ বছর পরিচালক থাকা যাবে। ২০২২ সালে আইএমএফের
ঋণ কর্মসূচি শুরুর পর ব্যাংকে পারিবারিক প্রভাব কমানোর পরামর্শ ছিল সংস্থাটির। ওই সময়
ব্যাংক কোম্পানি আইনের সংশোধনী এনে বলা হয়, কোনো একক পরিবার থেকে ৩ জনের বেশি সদস্য
একই সময়ে কোনো ব্যাংকে পরিচালক থাকবেন না। এর আগে যা ছিল ৪ জন। একই আইনের আরেকটি ধারা
যুক্ত করে বলা হয়, একক পরিবারের সদস্যের অতিরিক্ত তার নিয়ন্ত্রণাধীন অনধিক দুটি প্রতিষ্ঠান
বা কোম্পানির পক্ষে প্রতিনিধি পরিচালক থাকতে পারবেন। সংশোধনীতে এই ধারা বাদ দেওয়ার
প্রস্তাব রয়েছে। অন্যদিকে এক পরিবার থেকে সর্বোচ্চ তিনজনের পরিবর্তে দুজন পরিচালক থাকার
সুযোগ রাখা হচ্ছে।