বুলবুলের ‘শেয়ার অ্যান্ড কেয়ার’ তত্ত্ব কী
আইসিসিতে অনেক
বছর কাজ করেছেন বলেই হয়তো সবাইকে নিয়ে সমন্বয় করার ব্যাপারটি বেশ গুছিয়ে করতে পারেন
বিসিবি সভাপতি আমিনুল ইসলাম বুলুবুল। আবার দেড় দশক দেশের ক্রিকেটে খেলেছেন বলে তিনি
এটা জানেন সবার মন জুগিয়ে চলা কতটা কঠিন। সুযোগ পেলেই কানকথা দাবানলের মতো ছড়িয়ে পড়ে,
আবার মাঠের বাইরের কিছু কর্মকাণ্ড বিব্রতকর পরিস্থিতিতে ফেলে বিসিবিকে।
এমন পরিস্থিতির
মধ্যেই দেশের সর্বোচ্চ ক্রিকেট নিয়ামক সংস্থায় ‘করপোরেট কালচার’ তুলে আনতে চাইছেন বুলবুল।
দায়িত্ব গ্রহণের পরই তিনি ‘ট্রিপল সেঞ্চুরি’ তত্ত্বের কথা বলেছিলেন। যেখানে তিনি শতভাগ
বিশ্বাস, শতভাগ কর্মসূচি ও শতভাগ লক্ষপূরণ আনতে চেয়েছেন বাংলাদেশ ক্রিকেটে। এই মিশনে
তাঁর অন্যতম একটা কর্মসূচি ‘শেয়ার অ্যান্ড কেয়ার’।
যা দিয়ে ক্রিকেটার–বিসিবির
আরও কাছাকাছি আসা। গতকাল এই তত্ত্ব নিয়েই রাজধানীর একটি পাঁচতারা হোটেলে জাতীয় পুলের
ক্রিকেটার, কোচিং স্টাফ ও বিসিবি কমর্কতাদের নিয়ে একসঙ্গে বসেছিলেন বিসিবি সভাপতি।
তাঁর নতুন তত্ত্বের লক্ষ্য ক্রিকেটের সব অংশীজনের মধ্যে সমন্বয় করা।
ক্রিকেটারদের
কাছে তাদের ভাবনা শেয়ার করতে বলে কেয়ার করার দায়িত্বটা বিসিবি নিতে চেয়েছে মন খুলে।
আর সেজন্যই লিটন-মিরাজদের প্রত্যেকের কাছেই আটটি লিখিত প্রশ্ন দিয়ে একটি জরিপ করেছে
বিসিবি। যেখানে ক্রিকেটারদের কাছে জানতে চাওয়া হয়েছে তাদের যে লজিস্টিক সুবিধা দেওয়া
হয়, সেটা শতভাগ ঠিক আছে কিনা? কোচিং স্টাফ, মেডিকেল, ঘরোয়া ক্রিকেটের মান– এমন বিভিন্ন
ধরনের জিজ্ঞাসা ছিল ক্রিকেটারদের কাছে বিসিবির।
সেশনে উপস্থিত
কেউ কেউ মিরপুরে একটি সুইমিং পুলের দাবি তোলেন, কেউ ভেন্যু বাড়ানোর প্রস্তাব রাখেন।
বিসিবি সভাপতির মতে সেশনটি ছিল দারুণ প্রাণবন্ত। ‘যারা মাঠে ক্রিকেট খেলে তারা যেমন
অংশীদার, যারা ডাগআউটে থাকেন তারাও অংশীদার, আবার যারা বিসিবিতে বসে কাজ করেন তারাও
অংশীদার। মিডিয়াও দেশের ক্রিকেটের এগিয়ে যাওয়ার পথে অন্যতম অংশীদার। হারলে শুধু ক্রিকেটাররা
হারে না, বোর্ডও হারে। আজকের আলোচনা থেকে সবাই বুঝতে পেরেছে আমরা এক দল হিসাবেই কাজ
করছি।’
অস্ট্রেলিয়া
থেকে আসার এক দিন পরই গতকাল এ সেশন রাখেন বিসিবি সভাপতি। তাঁর ইচ্ছা তিন মাস পরপর এই
‘শেয়ার অ্যান্ড কেয়ার’ সেশনে সবাই একসঙ্গে বসুক। এদিন সকাল থেকেই মুশফিক-সৌম্যরা আসতে
থাকেন হোটেলে। অপেক্ষায় থাকা ক্যামেরার চোখে তখন একেক জন যেন গালা অনুষ্ঠানে আসা অতিথি।
এদিন ক্রিকেটারদের ভাবনা শোনার সঙ্গে সঙ্গে নিজেদের উপলব্ধিও তুলে ধরেন বিসিবি কর্মকর্তারা।
যেখানে উঠে আসে ক্রিকেটারদের ফেসবুক ব্যবহারের বিষয়টি।
বৈঠকে উপস্থিত
এক কর্মকর্তা জানান, বিসিবি সভাপতি সামাজিক মাধ্যম যত কম ব্যবহার করা যায়, তার পরামর্শ
দেন। কিছুদিন আগে তাসকিন আহমেদের সঙ্গে বন্ধুদের মারধর করার ব্যাপারটি নিয়ে বিব্রত
ছিলেন বিসিবি সভাপতি। বিষয়টিতে তাসকিনের পাশেই ছিল বোর্ড, তার পরও তাঁর মতো তারকাদের
এই ধরনের বিষয়ে জড়িয়ে পড়াটা ভালোভাবে নেননি অনেকে। এদিনের সেশনে বিসিবিতে আসা অ্যান্টিকরাপশন
কনসালট্যান্ট অ্যালেক্স মার্শালের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেওয়া হয়, যেখানে স্পষ্ট বলে দেওয়া
হয় ক্রিকেটে সততা ও নৈতিকতা নিয়ে সচেতনতা বাড়াতে হবে।
সামনে এশিয়ান
গেমস ও অলিম্পিকের মতো আসরে সুযোগ আসতে পারে, যেখানে ডোপ টেস্ট নিয়েও সচেতন থাকতে হবে।
এদিন এই সেশন শেষে সিলেটের উদ্দেশে রওনা হয়েছে বাংলাদেশ দল। সেখানে নেদারল্যান্ডসের
বিপক্ষে তিনটি টি২০ ম্যাচ খেলবেন লিটনরা। আগামী ডিসেম্বর পর্যন্ত গায়ে গায়ে সিরিজ,
তাই এর মধ্যে আর হয়তো এভাবে বসা হবে না। এদিনের শেয়ার অ্যান্ড কেয়ার সেশনে পরিষ্কার
বার্তা দেওয়া– ভাবনা শেয়ার করতে হবে, তাহলেই কেয়ার মিলবে।